স্মার্টফোন এখন আমাদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। হুট করেই ফোন আসে বন্ধু, পরিবার, অফিস বা প্রিয়জনের—এবং গল্প জমে উঠে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। কিন্তু প্রশ্ন হলো, ফোনে টানা কথা বলার কোনও শারীরিক বা মানসিক ক্ষতি হয় কি? কিংবা সর্বোচ্চ কতক্ষণ কথা বললে তা নিরাপদ?
এই প্রতিবেদনে জানুন ফোনে দীর্ঘ সময় কথা বলার বিজ্ঞান, এর ঝুঁকি এবং নিরাপদ ব্যবহারের পরামর্শ।
টানা ফোনে কথা বললে শরীরের কী হয়?
১. রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি (RF) বিকিরণ
মোবাইল ফোনে কথা বলার সময় ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক ফ্রিকোয়েন্সি (EMF) বা RF বিকিরণ সরাসরি কানে লাগে।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, যদিও এটি আইওনাইজিং বিকিরণ নয় (যা ক্যানসার সৃষ্টি করে), তবে দীর্ঘ সময় একটানা কানের কাছে ধরে রাখলে টিস্যু উত্তাপ বাড়তে পারে এবং মাথাব্যথা, ক্লান্তি, ঘুমের সমস্যা হতে পারে।
২. শ্রবণশক্তি ও কানের চাপ
লম্বা সময় ধরে এক কান দিয়ে ফোনে কথা বললে-
**কানে ব্যথা
**শ্রবণশক্তি হ্রাস
**কানের ভিতরের ব্যালান্সে সমস্যা
এই সমস্যা দীর্ঘমেয়াদে বিরক্তিকর হতে পারে।
৩. মস্তিষ্কে চাপ ও স্ট্রেস
টানা ফোনে কথা বললে অনেক সময় একদিকে মাথা ভারী লাগে। বিশেষ করে যদি তা হয় ভিডিও কল বা অনিয়মিত শব্দের সঙ্গে, তখন মস্তিষ্ক বেশি চাপ নেয়। কারও কারও ক্ষেত্রে মাইগ্রেন বাড়ে।
গবেষণায় কী বলছে?
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) ও ICNIRP-এর মতে, প্রতিদিন মোবাইল ফোন ব্যবহারের একটি ‘নিরাপদ সীমা’ থাকা উচিত।
২০১৭ সালের একটি গবেষণায় বলা হয়, একটানা ৩০ মিনিটের বেশি ফোনে কথা বললে মস্তিষ্কের স্নায়ু উত্তেজিত হয়, বিশেষ করে বয়স্কদের ক্ষেত্রে।
ব্যাটারি বা ফোন ক্ষতি?
অনেকেই ভাবেন, টানা কথা বললে শুধু ব্যাটারি কমে। কিন্তু overheating বা হ্যান্ডসেট গরম হয়ে যাওয়া, স্পিকার বা মাইক্রোফোনের কার্যকারিতা কমে যাওয়া, এমনকি ফোন হ্যাং করার ঘটনাও ঘটে দীর্ঘ কল ব্যবহারে।
তাহলে, ফোনে টানা কতক্ষণ কথা বলা নিরাপদ?
**বিশেষজ্ঞদের মতে: ব্যবহারের ধরন নিরাপদ সময়সীমা
**একটানা কানে ফোন রেখে কথা বলা, সর্বোচ্চ ১৫–২০ মিনিট
**ইয়ারফোন/হেডসেট ব্যবহার ৩০–৪৫ মিনিট (কম ভলিউমে)
**স্পিকার মোডে ১ ঘণ্টা বা তার বেশি (বিশ্রামসহ)
**টানা ২০–২৫ মিনিট পর ৫ মিনিট বিরতি নেওয়া সবচেয়ে ভালো।
নিরাপদ ব্যবহারের পরামর্শ:
**স্পিকারফোন বা হেডফোন ব্যবহার করুন
**প্রয়োজনে কল মাঝখানে বিরতি দিন
**ফোন ডান-বাম দুই কানে পালাক্রমে ধরুন
**ফোন গরম হয়ে গেলে কথা বলা বন্ধ করুন
**রাতে ঘুমানোর আগে দীর্ঘ কল এড়িয়ে চলুন
একটানা কথা বলার ক্ষেত্রে শুধু ব্যাটারি নয়, চিন্তা করতে হবে আপনার স্বাস্থ্য নিয়েও। ফোনে কথা বলতেই হবে—তবে তা হোক সচেতনতার সঙ্গে। স্বাস্থ্যের জন্যও বিরতি জরুরি—কথার মাঝে হোক একটু নীরবতা।
নিউজটি আপডেট করেছেন : প্রতিনিধি