নবীজি সা. উম্মতের প্রতি অতি দয়াপরবশ হওয়ার কারণে সবসময় উম্মতের জন্য সহজতা কামনা করতেন। বিধান দেয়ার ক্ষেত্রে উম্মতের কষ্টের কথা বিবেচনা করে সহজ করার চেষ্টা করতেন। উম্মত যেন অল্প আমল ও সল্প মেহনতে অনেক বেশি সওয়াব অর্জন করতে পারেন সে দিকে তিনি সব সময় লক্ষ্য রাখতেন। হাদিস শরিফে এর বহু প্রমাণ রয়েছে। আমাদের উপলব্ধির জন্য কয়েকটি বর্ণনা পেশ করছি।এক. মিসওয়াকের ক্ষেত্রে সহজতা কামনা। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন- لَوْلَا أنْ أشُقَّ علَى أُمَّتي لَأَمَرْتُهُمْ بالسِّوَاكِ مع كُلِّ صَلَاةٍ. যদি আমার উম্মতের জন্য কষ্টকর মনে না করতাম, তাহলে প্রত্যেক নামাজের সময় তাদেরকে মিসওয়াক করার আদেশ দিতাম। (সহিহ বোখারি, হাদিস- ৮৮৭)
দুই. নবীজি (সা.) জিহাদের ক্ষেত্রে উম্মতের সহজতার প্রতি লক্ষ্য করে বলেছিলেন-لَوْلَا أَنْ أَشُقَّ عَلَى أُمَّتِي مَا تَخَلَّفْتُ عَنْ سَرِيَّةٍ যদি আমি আমার উম্মতের উপর কষ্টকর মনে না করতাম, তাহলে কোনো সেনা অভিযান থেকে আমি পিছিয়ে থাকতাম না। (সহিহ বোখারি, হাদিস- ২৯৭২)
যেহেতু সবার জন্য বাহনের ব্যবস্থা করা যেত না এবং কিছু দুর্বল মানুষ মদিনায় থেকে যেত, সেহেতু নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও কখনো কখনো জিহাদে না গিয়ে মদিনা শরিফে থেকে যেতেন। ফলে তারা সান্ত্বনা পেত।
তিন. ইশার নামাজ বিলম্বে পড়ার ব্যাপারে সহজতা-لَوْلَا أَنْ أَشُقَّ على الْمُؤْمِنِينَ لَأَمَرْتُهُمْ بِتَأْخِيرِ الْعِشَاءِ যদি আমি মুমিনদের জন্য কষ্টকর মনে না করতাম তাহলে ইশার নামাজ বিলম্বে (রাতের এক তৃতীয়াংশ অতিবাহিত হওয়ার পর) আদায়ের নির্দেশ দিতাম। (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস- ৪৬)
চার. তারাবির নামাজ ফরজ হয়ে যাওয়ার ভয়ে নিয়মিত জামাত সহকারে আদায় করেননি। যেমন, হাদিস শরিফে বর্ণিত হয়েছে, আম্মাজান আয়েশা রা. বলেন, (রমজানের) কোনো এক রাতের মধ্যভাগে মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়লেন। কিছু সংখ্যক পুরুষ তাঁর সাথে নামাজ পড়লেন। সকালে তারা বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করলেন। ফলে দ্বিতীয় রাতে লোকের সংখ্যা আরো বেড়ে গেল।
তৃতীয় রাতে মুসল্লির সংখ্যা অনেক বেড়ে গেল। চতুর্থ রাতে মুসল্লির সংখ্যা এত অধিক হল যে, মসজিদে লোকের সংকুলান হচ্ছিল না; কিন্তু নবীজি ঘর থেকে বের হলেন না। (অর্থাৎ, নামাজ পড়াতে আসলেন না।) ফজরের সময় এসে নামাজ পড়ালেন। অতঃপর আল্লাহ তাআলার হামদ ও ছানা পাঠ করে বললেন-
فَإِنَّهُ لَمْ يَخْفَ مَكَانَكُمْ وَ لَكِنِّي خَشِيْتُ أَنْ تُفْتَرَضَ عَلَيْكُمْ فَتَعْجِزُوا শোন! তোমাদের (গত রাতের) অবস্থা আমার অজানা ছিল না, আমি এ নামাজ তোমাদের উপর ফরজ হয়ে যাওয়ার আশংকা করেছি। (যার কারণে ঘর থেকে বের হইনি) কেননা, তোমরা তা আদায় করতে অপরাগ হয়ে যেতে। (সহিহ বোখারি, হাদিস- ২০১২)
পাঁচ. মেরাজের রজনিতে ফরজ নামাজ কমানোর ঘটনা তো প্রসিদ্ধ। উম্মতের উপর কষ্ট হয়ে যাবে মনে করে ৫০ ওয়াক্ত থেকে কমিয়ে ৫ ওয়াক্তে এনেছেন। (সহিহ বোখারি, হাদিস- ৩৪৯)
ছয়. ইমামকে নামাজ সংক্ষেপ করার নির্দেশ-
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : إِذَا صَلَّى أَحَدُكُمْ لِلنَّاسِ، فَلْيُخَفِّفْ، فَإِنَّ مِنْهُم الضَّعِيفَ وَالسَّقِيمَ وَالكَبِيرَ، وَإِذَا صَلَّى أَحَدُكُمْ لِنَفْسِهِ فَلْيُطَوِّلْ مَا شَاءَ
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, তোমাদের কেউ যখন ইমামতি করে সে যেন সংক্ষেপ করে। কেননা, তাদের মাঝে দুর্বল, অসুস্থ ও বৃদ্ধরা থাকে। আর যখন কেউ একাকী নামাজ আদায় করে যত ইচ্ছা দীর্ঘ করতে পারে। (সহিহ বোখারি, হাদিস- ৭০৩)
এসব ঘটনা দ্বারা এটাই প্রমাণিত হয় যে, উম্মতের জন্য নবীজির অন্তরে সীমাহীন মুহাব্বত ও ভালোবাসা ছিল। তিনি তো আমাদেরকে অধিক পরিমাণ ভালোবাসতেন। আমাদের চিন্তা করা প্রয়োজন আমরা তাকে কতটুকু ভালোবাসি? তথ্যসূত্র: উম্মতের প্রতি নবীজির ভালোবাসা পৃ: ২৩-২৫