সম্পদের নেসাব হলো- স্বর্ণের ক্ষেত্রে সাড়ে সাত ভরি। আর রুপার ক্ষেত্রে সাড়ে বায়ান্ন ভরি। আর অন্যান্য বস্তুর ক্ষেত্রে সাড়ে বায়ান্ন ভরি রুপার সমমূল্যের সম্পদ। স্বর্ণ বা রুপার কোনো একটি যদি পৃথকভাবে নেসাব পরিমাণ না হয়, তবে স্বর্ণ-রুপা উভয়টি মিলে কিংবা এর সঙ্গে প্রয়োজন-অতিরিক্ত অন্য বস্তুর মূল্য মিলে সাড়ে বায়ান্ন ভরি রুপার সমমূল্যের হয়ে যায় সে ক্ষেত্রেও কুরবানি ওয়াজিব হবে। স্বর্ণ-রুপার অলঙ্কার, নগদ অর্থ, যে জমি বার্ষিক খোরাকির জন্য প্রয়োজন হয় না এবং প্রয়োজন অতিরিক্ত আসবাবপত্র— এসবই কুরবানির নেসাবের ক্ষেত্রে হিসাবযোগ্য।
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি সামর্থ্য থাকার পরও কোরবানি করে না, সে যেন আমাদের ঈদগাহের কাছে না আসে।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৩১২৩)
রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, আল্লাহতাআলার নিকট কোরবানির দিন মানবজাতির কোরবানি অপেক্ষা অধিকতর পছন্দনীয় কোনো আমল নেই। বিচারদিনে কোরবানির পশুকে তার শিং, পশম ও খুরসহ উপস্থিত করা হবে। পশুর রক্ত জমিনে পড়ার পূর্বেই আল্লাহর কাছে তা বিশেষ মর্যাদায় পৌঁছে যায়, সুতরাং তোমরা আনন্দচিত্তে কোরবানি করো। (তিরমিজি, হাদিস : ১৩৯১)
নেসাব হলো: সম্পদ বা টাকার নিসাব
কী পরিমাণ টাকা বা সম্পদ থাকলে কোরবানি আবশ্যক; এ সম্পর্কে ইসলামিক স্কলারদের থেকে রয়েছে সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা-
হিজরি বছরের জিলহজ মাসের ১০, ১১ ও ১২ তারিখ কোরবানির পশু জবাই করতে হয়। কোরবানি দেওয়ার জন্য শর্ত হলো এ দিনগুলোতে পরিবারের জীবিকা নির্বাহের খরচ ছাড়া অতিরিক্ত নিসাব (নির্ধারিত) পরিমাণ সম্পদ বা টাকার মালিক কিংবা নির্ধারিত পরিমাণ রুপা বা স্বর্ণ’র বাজার দর অনুযায়ী ৯০ হাজার থেকে ১২ লাখ টাকা থাকে তাহলে তার ওপর কোরবানি ওয়াজিব।
স্বর্ণের নিসাব ও মূল্যের বিবরণ
কেউ যদি স্বর্ণকে নিসাব ধরে তবে তাকে সাড়ে ৭ ভরি/তোলা স্বর্ণের মূল্যের উপর টাকার পরিমাণ হিসাব করতে হবে। যেমন চলতি বছরে ১৩ মে স্বর্ণের দামের হিসাব অনুযায়ী-
২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম ১ লাখ ৬৯ হাজার ১৮৬ টাকা সাড়ে ৭ ভরি স্বর্ণের দাম- ১২ লক্ষ ৬৮ হাজার ৮৯৫ টাকা
২১ ক্যারেটের প্রতি ভরি রুপার দাম ২ হাজার ৬৮৩ টাকা হিসাবে সাড়ে ৫২ তোলা বা ভরির দাম হয়- ১ লক্ষ ৪০ হাজার ৮৫৭ টাকা।
১৮ ক্যারেটের প্রতি ভরি রুপার দাম ২ হাজার ২৯৮ টাকা হিসাবে সাড়ে ৫২ তোলা/ভরির দাম হয়- ১ লক্ষ ২০ হাজার ৬৪৫ টাকা এবং
সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি রুপার দাম ১ হাজার ৭২৬ টাকা হিসাবে সাড়ে ৫২ তোলা/ভরির দাম ৯০ হাজার ৬১৫ টাকা।
তাই কারো কাছে পরিবারের খরচ মেটানোর পর যদি জিলহজ মাসের ১০, ১১ ও ১২ তারিখ সর্বনিম্ন ১ লক্ষের কিছু বেশি টাকার রুপা ও সাড়ে ১২ লক্ষ টাকার স্বর্ণ বা সম্পদ থাকে তবে তাকে নিসাব পরিমাণ অর্থের বিধান অনুযায়ী কোরবানি করতে হবে।
আল্লাহতাআলা মুসলিম উম্মাহর সব নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিকদেরকে যথাযথভাবে কোরবানি আদায় করার মাধ্যমে তার নৈকট্য অর্জনের তাওফিক দান করুন।