সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি)-এর সম্মানীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছেন, বাংলাদেশ সরকার জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) কে দুই ভাগে বিভক্ত করার সিদ্ধান্ত সঠিক হলেও, প্রক্রিয়া তেমন কার্যকর হয়নি। তিনি জানান, এটি শ্বেতপত্রে উল্লেখিত ছিল, তবে বাস্তবায়নের পদ্ধতি প্রশ্নবিদ্ধ।
সোমবার (১৭ মে) এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম আয়োজিত ‘বাংলাদেশ অর্থনীতি ২০২৫-২৬: নীতি সংস্কার ও জাতীয় বাজেট’ শীর্ষক সেমিনারে তিনি মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।
এসময় ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, দেশে বেকারত্বের হার বর্তমানে ১৪ শতাংশে পৌঁছেছে এবং শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির হার মূল্যস্ফীতির তুলনায় অনেক নিচে। এদিকে, দেশের অর্থনীতি এখনও ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। ‘অর্থনীতি এখনো ঘুরে দাঁড়াচ্ছে কিনা, তা বলা যাচ্ছে না,’ তিনি জানান, বর্তমান প্রবৃদ্ধি সম্ভবত ভোগ তাড়িত হবে, বিনিয়োগ তাড়িত নয়।
তিনি কর আদায়ের সমস্যা উল্লেখ করে বলেন, ‘গত কয়েক দশকে কর আদায় নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা সত্ত্বেও পরিস্থিতি তেমন পরিবর্তিত হয়নি।’ বর্তমানে কর-জিডিপি অনুপাত ১০ শতাংশের নিচে থাকায়, কর-সংক্রান্ত সমস্যা উত্থিত হয়েছে। তিনি বাজেটের ব্যয়ের দিকেও সংকটের চিত্র তুলে ধরেন, বিশেষত সুদ এবং ভর্তুকির ব্যয় সবচেয়ে বেশি।
মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে দুর্বলতার কথা উল্লেখ করে ড. দেবপ্রিয় বলেন, ‘মুদ্রানীতি কার্যকরভাবে প্রতিফলিত হয়নি, দেশের মূল্যস্ফীতি ৮ থেকে ৯ শতাংশে আসা পর্যন্ত কোনো সিগন্যাল পাওয়া যাবে না।’ একই সঙ্গে তিনি দেশের চরম দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাসরত মানুষের সংখ্যা বাড়ছে বলেও সতর্ক করেন। যুব দারিদ্র্যের বৃদ্ধির বিষয়ে তিনি আলোকপাত করেন।
ড. দেবপ্রিয় আরও বলেন, ‘বর্তমানে দেশের আমলাতন্ত্র শক্তিশালী হয়ে উঠছে, যা গত এক দশকে একটি বড় পরিবর্তন হিসেবে দেখা যাচ্ছে।’ আওয়ামী লী‘বাস্কেট কেস’ ধরণের পুরনো, নেতিবাচক ধারণা থেকে বেরিয়ে এসে দেশের উন্নয়ন ও সক্ষমতা নিয়ে আত্মবিশ্বাসী হওয়ার উপর তিনি জোর দেন। পাশাপাশি, স্থিতিশীল ও ন্যায্য আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক কাঠামোর অনুপস্থিতির দিকটি তুলে ধরেন, যা আজকের দিনে উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জ।
ইসলামী অর্থনীতি এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক অংশীদারিত্বের মডেল অনুসরণের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘নীতিগত সংস্কার শুধুমাত্র অর্থনৈতিক কৌশল নয়, বরং এটি একটি নৈতিক ও টেকসই কাঠামো গঠনের মাধ্যম।’ তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের ২০৪১ সালের ভিশনের দিকে এগিয়ে যেতে হলে আরও সংস্কার, উদ্ভাবনী নীতি এবং নৈতিক সুস্পষ্টতার প্রয়োজন রয়েছে।গের আমলে চোরতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হওয়ার বিষয়টি তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘তখন এই চোরতন্ত্রে ছিল আমলারা, ব্যবসায়ীরা এবং রাজনীতিবিদরা। এখন রাজনীতিবিদরা পালিয়ে গেছেন, ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত, কিন্তু আমলারা পুরো শক্তি নিয়ে পুনরায় উঠে এসেছে।’
প্রধান উপদেষ্টা অনিসুজ্জামান চৌধুরী তার বক্তব্যে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক যাত্রার বিশ্লেষণ তুলে ধরেন। তিনি ১৯৭১ সালের অর্থনৈতিক ধস এবং প্রেসিডেন্ট নিক্সনের স্বর্ণ মান পরিত্যাগের সিদ্ধান্তের মতো বৈশ্বিক ঘটনাবলী উল্লেখ করে বলেন, বাংলাদেশের বর্তমান অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জগুলি ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে সম্পর্কিত।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Monir Zaman