রিয়া, শো অফ, লেৌকিকতা বা আত্মপ্রচারের সাধারণত চারটি স্তর আছে। ইমাম গাজালি (রহ.) ইহয়ায়ু উলুমিদ্দিন'-এ বিস্তারিত বর্ণনা করেছেন। এক. রুঢ়তর। ইবাদতে মোটেও সাওয়াবের ইচ্ছা না থাকা। অর্থাত্, কেউ একা হলে ইবাদত করে না; কিন্তু জনসম্মুখে হলে ঠিকই ইবাদত করে। এমনকি অনেক ক্ষেত্রে অজু ছাড়াও নামাজ আদায় করে নেয়।
তেমনি কেউ মানুষের ঘৃণা বা গালি থেকে বাঁচার জন্য দান করে। এতে কোনো সাওয়াবের আশা রাখে না।
বিধান : এটি রিয়া বা শো অফের সর্বোচ্চ স্তর। এটি আল্লাহর পাকের নিকট খুবই জঘন্য ও ঘৃণিত।
দুই. সাওয়াবের ইচ্ছা থাকলেও তা ক্ষীণ। অর্থাত্ম, নির্জনে হলে সে ওই আমলটি করার ইচ্ছা করে না; লোকালয়ে হলে সে আমলটি ঠিকই করে, কিন্তু সাওয়াবের আশা রাখে।
বিধান : এরূপ ব্যক্তিও প্রথমোক্ত ব্যক্তির নিকটবর্তী। কারণ, তার এমন ইচ্ছা নেই যা তাকে ঐ আমল করার প্রতি উদ্বুদ্ধ করতে পারে। এরূপ ইচ্ছা থাকা-না থাকা উভয়ই সমান।
তিন. সওয়াবের ইচ্ছার সঙ্গে সঙ্গে প্রচারের ইচ্ছাও থাকা। অর্থাত্, সওয়াব ও রিয়া উভয়টির ইচ্ছা একত্রিত হলে সে ইবাদত করে, অন্যথায় ইবাদত করে না।
বিধান : যেন সে যতটুকু নষ্ট করে ততটুকু গড়ে। ফলে আশা করা যায়, তার সওয়াবও হবে না এবং আজাবও হবে না। অথবা যে পরিমাণ আজাব হবে সে পরিমাণ সাওয়াব হবে। অবশ্য হাদিসের বাহ্যিক অর্থ থেকে বুঝা যায় এরূপ ব্যক্তিও আজাব থেকে বাঁচতে পারবে না।
চার. সওয়াবের প্রবল ইচ্ছা থাকলেও রিয়ামুক্ত হয় না। অর্থাত্ম, সে একানে্ত ইবাদত করে; কিন্তু মানুষ তার এ ইবাদত জানতে পারলে সে আনন্দিত ও উদ্বেলিত হয়।
বিধান : আশা করা যায় এরূপ ব্যক্তির মূল সাওয়াব বাতিল হবে না; তবে কিছু সাওয়াব হ্রাস পাবে। অথবা রিয়ার পরিমাণ আযাব ভোগ করতে হবে এবং সাওয়াবের ইচ্ছা সমপরিমাণ সাওয়াব পাবে। ইহয়ায়ু উলুমিদ্দিন : খ. ৩, পৃ. ৩০১।
রিয়া বা লৌকিকতা হারাম কেন?
রিয়া নিম্নোক্ত কারণে রিয়া হারাম
এক. রিয়া হলো- আল্লাহর সন্তুষ্টির ওপর মাখলুকের সন্তুষ্টিকে প্রাধান্য দেওয়া। এটি আল্লাহর সাথে জঘন্য বেয়াদবি। কারণ, এটি স্রষ্টার ওপর সৃষ্টিকে প্রাধান্য দেওয়ার নামান্তর। তাই হাদিসে রিয়াকে শিরকে আসগর' বলা হয়েছে।
দুই. লেৌকিকতা প্রদর্শনকারী এই ক্ষণস্থায়ী দুনিয়াতেই নিজ ইবাদতের প্রতিদান পেতে চায়। তাই আল্লাহ তাআলা দুনিয়াতেই তার প্রতিদান দিয়ে দেন; আখেরাতে তার জন্য কোনো প্রতিদান রাখেন না।
আধুনিক রিয়া
আজকাল শো অফ করার জন্য নতুন নতুন বাক্য আবিষ্কার করেছে। যেমন-
•আমি শো অফ করা পছন্দ করি না।
•আমার একটাই দুঃখ শো অফ করতে পারি না।
•শো অফ করা এখন ফ্যাশন হয়ে গেছে।
•দ্বিন প্রচারের জন্য মূলত নিজের ওয়াজ ভিডিও করে প্রচার করছি।
•দ্বিনের দাওয়াত নিয়ে আজ.... বয়ান করতে যাচ্ছি, দোয়ার অনুরোধ।
•দ্বিন প্রচারের উদ্দেশ্যে আজ যাচ্ছি....., আল্লাহ ইখলাসের সাথে কাজ করার তাওফিক দান করম্নক।
ওয়াজ শোনার এক পর্যায়ে চিত্কার করে শো অফ
রবি ইবনে সবিহ বলেন- আমরা একদিন হাসান বসরির নিকট ছিলাম, তিনি আমাদের ওয়াজ করলেন। হঠাত্ এক লোক ওয়াজের প্রভাবে চিত্কার করে উঠল, তখন হাসান বসরি তাকে বললেন, আল্লাহর কসম, আল্লাহ তাআলা কিয়ামতের দিন তোমাকে এ চিত্কার সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করবেন- এর দ্বারা তোমার উদ্দেশ্য কী ছিল। (কিতাবুয যুহুদ, আবদুল্লাহ ইবনুল মুবারক, পৃ. ২১৯)
সিজদায় কান্না করে শো অফ
সাহাবি আবু উমামা (রা.) একদিন মসজিদে এসে দেখেন, এক ব্যক্তি নামাজ পড়ছে এবং সেজদায়ে গিয়ে খুব কাঁদছে ও দোয়া করছে। তখন আবু উমামা (রা.) লোকটিকে বললেন- তুমি তুমিই (অর্থাত্ তোমার এসব কর্মকাণ্ড সত্য এবং সাওয়াব পাবে) যদি এমনটি তুমি ঘরেও করে থাকো। (প্রাগুক্ত, পৃ. ৮৫)
হাকিমুল উম্মাহ আশরাফ আলি থানভি (রহ.) বলেন- ইখলাস সহকারে সামান্য আমলও কবুল হয়ে যায়। তেমনি ইখলাসবিহীন মুক্তমনেও কোনো আমল করলে তাও কবুল হয়ে যায়।
মুক্তমনে আমল করার অর্থ হলো- মনে কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যও না থাকা; তেমনি লোক দেখানোর নিয়তও না থাকা। তবে আসল রিয়ার সম্পর্ক অন্তরের সাথে। যদি বাহ্যত কোনো কাজ রিয়া মনে হলেও অন্তরে না থাকলে তা জায়েজ। (কামালাতে আশরাফিয়া : পৃ. ১২৩, নসিহাতুল ওলামা : পৃ. ২৭)
নিউজটি আপডেট করেছেন : বার্তা সম্পাদক