শহরের বিভিন্ন এলাকায় দিনে দুপুরে গাড়ির যন্ত্রাংশ হারিয়ে যাওয়া নিত্য দিনের ঘটনা। গণমাধ্যমের তথ্যমতে, রাজধানীতে এমন কিছু চক্র আছে, যাদের কাজই হচ্ছে, গাড়ীর লোগো, স্টিকার, লুকিং গ্লাস ইত্যাদি চুরি করে চোরাই বাজারে বিক্রি করে দেওয়া। পরবর্তীতে ভুক্তভোগীরাই দেখা যায় আবার সে বাজার থেকে এসব যন্ত্রাংশ উচ্চ মূল্যে কিনে আনতে হয়। ক্ষেত্র বিশেষে কিছু যন্ত্রাংশের মূল্য লাখ টাকা পর্যন্ত হতে পারে।
কিন্তু এই কাজটি করতে চোরচক্রের খুব বেশি সময় লাগে না, কয়েক সেকেন্ডেই তারা পার্ক করা গাড়ি, কিংবা যানজটের কারণে ধীর গতিতে পরিচালিত হওয়া গাড়ি থেকে যন্ত্রাংশ চুরি করে দ্রুত শটকে পড়তে পারে। আশপাশ অনেকে দেখেও না দেখার ভান করে থাকে, সাধারণত তাদের প্রতিরোধ করার চেষ্টা কেউ করে না। ফলে এ ধরনের চোররা আরও ব্যাপক ভাবে অপরাধ করার উত্সাহ পায়।
এখানে একদিকে যেমন ছিনতাইয়ের মারাত্মক গুনাহ সংঘটিত হয়, তেমনি অন্যদিকে মুমিনের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব ‘নাহি আনিল মুনকার’ বা অসৎ কাজে বাধা প্রদানের দায়িত্ব লঙ্ঘিত হয়। নিম্নে এ বিষয়ে সংক্ষেপে আলোচনা করার চেষ্টা করব ইনশাআল্লাহ।
চুরি/ছিনতাই কত বড় অপরাধ : ইসলামের দৃষ্টিতে চুরি/ছিনতাই এগুলো খুবই মারাত্মক অপরাধ। এতটাই মারাত্মক অপরাধ যে কোনো দেশে ইসলামী শাসন ব্যবস্থা থাকলে এবং চোরের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ দলিল-প্রমাণের মাধ্যমে প্রমাণিত হলে তার হাত কেটে দেওয়ার বিধান রয়েছে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আর পুরুষ চোর ও নারী চোর তাদের উভয়ের হাত কেটে দাও তাদের অর্জনের প্রতিদান ও আল্লাহর পক্ষ থেকে শিক্ষণীয় আজাবস্বরূপ এবং আল্লাহ মহা পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।’ (সুরা মায়েদা, আয়াত : ৩৮)
নবীজি (সা.) বলেছেন, যারা ছিনতাই করে, তারা আমার দলভুক্ত নয়। (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৩৪০)
ছুরি/ছিনতাইয়ের ব্যাপারে ইসলামে কঠোর শাস্তির বিধান থাকলেও ইসলামি শাসন ব্যবস্থা না থাকায় এগুলো প্রয়োগ এ অঞ্চলে নেই। তবে প্রচলিত আইনেও সঠিক ভাবে এসব চোর/ছিনতাইকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেত, তাহলেও হয়ত এসব ঘটনা অনেকটা কমে যেত। কিন্তু বাস্তবতা হলো, এসব চোরের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়েরের ঘটনা বা তাদের বিচারের আওতায় আনার ঘটনা একেবারেই কম। অনেকে এদের বিরুদ্ধে অভিযোগই দায়ের করে না, আবার অভিযোগের ভিত্তিতে কিছু সংখ্যক অপরাধী ধরা পড়লেও কৌশলে উপযুক্ত শাস্তি না পেয়েই পার পেয়ে যাওয়ার সুযোগ আছে। অথচ কোনো রাষ্ট্র যদি ইসলামের আইন অনুযায়ী এদের বিচারের আওতায় আনত তাহলে কোনো চোরই এই অপরাধ করার সাহস পেত না।
সামাজিক প্রতিরোধ না করার ক্ষতি : ইসলামের দৃষ্টিতে সামাজিক শৃঙ্খলা বজায় রাখার ক্ষেত্রে যেমন সৎ কাজে আদেশ দেওয়া জরুরি, তেমনি কোথাও কোনো অপরাধ সংঘটিত হলে, সাধ্যমতো তা প্রতিহত করাও জরুরি। নইলে অপরাধীরা অপ্রতিরোধ্য হয়ে ওঠে।
পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আর যেন তোমাদের মধ্য থেকে এমন একটি দল হয়, যারা কল্যাণের প্রতি আহবান করবে, ভালো কাজের আদেশ দেবে এবং মন্দ কাজ থেকে নিষেধ করবে। আর তারাই সফলকাম।’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত : ১০৪)
তাই আমাদের উচিত, সামাজিক সংঘটিত সব ধরনের অপরাধের বিরুদ্ধে সামাজিক সচেতনতা গড়ে তোলা। কোথাও অপরাধ হতে দেখলে সম্মিলিত ভাবে তা প্রতিরোধ করার মানসিকতা তৈরি করা। অবশ্যই স্থান, কাল, পাত্র ও নিজের সক্ষমতা বিবেচনা করে নিজের সর্বোচ্চ দিয়ে অপরাধ দমনের চেষ্টা করতে হবে। কেননা হাদিস শরীফে এসেছে, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, তোমাদের কেউ গর্হিত কাজ হতে দেখলে সে যেন স্বহস্তে (শক্তি প্রয়োগে) পরিবর্তন করে দেয়, যদি তার সে ক্ষমতা না থাকে, তবে মুখ (বাক্য) দ্বারা এর পরিবর্তন করবে। আর যদি সে সাধ্যও না থাকে, তখন অন্তর দ্বারা করবে, তবে এটা ঈমানের দুর্বলতম পরিচায়ক। (মুসলিম, হাদিস : ২১)
কিন্তু সবাই যদি এসব পাপ দেখেও না দেখার ভান করে বসে থাকে, তবে সবাইকে আল্লাহর আজাবের সম্মুখীন হতে হবে। আমরা রাসুলুল্লাহ (সা.) কে বলতে শুনেছি, লোকেরা মন্দ কাজ করতে দেখে তা পরিবর্তনের চেষ্টা না করলে অচিরেই আল্লাহ তাদরে উপর ব্যাপকভাবে শাস্তি পাঠান। (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৪০০৫)
মহান আল্লাহ সবাইকে সচেতন হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।
নিউজটি আপডেট করেছেন : বার্তা সম্পাদক