ভারত-মার্কিন সম্পর্কবিষয়ক বিশ্লেষক ও মার্কিন সরকারের উপদেষ্টা অ্যাশলে টেলিসকে গ্রেপ্তার করেছে যুক্তরাষ্ট্র। অভিযোগ, তিনি অবৈধভাবে জাতীয় নিরাপত্তা সংক্রান্ত গোপন নথি নিজের কাছে রেখেছিলেন এবং চীনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করেছেন।
মঙ্গলবার (১৫ অক্টোবর) টেলিসকে আদালতে তোলা হয়। তার পরবর্তী শুনানি হবে আগামী ২১ অক্টোবর। বিষয়টি নিয়ে সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা একটি এক্সপ্লেইনার প্রকাশ করেছে। যেখানে বলা হয়েছে কে এই টেলিস, তার উত্থান-ই বা কীভাবে। সন্দেহ হবার পর থেকে মার্কিন গোয়েন্দারা কীভাবে তার পেছনে লেগে ছিলেন, তাও উল্লেখ করা হয়।
কে এই অ্যাশলে টেলিস?
৬৪ বছর বয়সী টেলিস ভারতের মুম্বাইয়ে জন্মগ্রহণ করেন। পরে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব গ্রহণ করেন। তিনি দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে মার্কিন প্রশাসনের পরামর্শক হিসেবে ভারত-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক, প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা ইস্যুতে কাজ করছেন।
তিনি মুম্বাই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর এবং শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে মাস্টার্স ও পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেছেন।
টেলিস সাবেক প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশের আমলে (২০০১-২০০৯) জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদে কাজ করেন। এর আগে তিনি মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের কর্মকর্তা হিসেবে দিল্লিতে যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসে সিনিয়র উপদেষ্টা ছিলেন।
অভিযোগ কী?
মার্কিন প্রসিকিউটরদের দাবি, টেলিস মার্কিন আইন ভঙ্গ করেছেন, যা প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত গোপন নথি সংগ্রহ বা হারানোর অপরাধ হিসেবে গণ্য হয়।
আদালতের নথি অনুযায়ী, গত ১২ সেপ্টেম্বর টেলিসকে প্রতিরক্ষা বিভাগের এক অফিসে দেখা যায়, যেখানে তিনি কম্পিউটার ব্যবহার করে একজন সহকর্মীকে কিছু নথি প্রিন্ট করতে বলেন। ১০ অক্টোবর তাকে আবারও একই ভবনে দেখা যায়, সেখান থেকে তিনি কিছু শ্রেণিবদ্ধ নথি নিজের সঙ্গে নিয়ে যান।
২৫ সেপ্টেম্বর তিনি যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতরে প্রবেশ করে প্রায় এক ঘণ্টা ধরে নিজস্ব সিস্টেমে কাজ করেন। যে সিস্টেমে গোপন নানা নথি সংরক্ষিত থাকে। ওই দিন তিনি একটি এক হাজার পৃষ্ঠার এয়ার ফোর্স সংক্রান্ত নথি ডাউনলোড ও প্রিন্ট করেন বলে অভিযোগ।
এরপর ১১ অক্টোবর ভার্জিনিয়ার ভিয়েনায় তার বাসা ও গাড়ি তল্লাশি চালিয়ে গোপন সরকারি নথি উদ্ধার করে কর্তৃপক্ষ।
চীনা কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক
আদালতের হলফনামায় বলা হয়েছে, টেলিস ২০২২ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে একাধিকবার চীনা কর্মকর্তাদের সঙ্গে ডিনারে মিলিত হন।
২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে ভার্জিনিয়ার ফেয়ারফ্যাক্সে এক রেস্তোরাঁয় তিনি একটি খাম হাতে প্রবেশ করেন। তবে দুই ঘণ্টা পর বের হওয়ার সময় সেটি তার কাছে দেখা যায়নি।
২০২৩ সালের এপ্রিলে আবারও একই এলাকায় চীনা কূটনীতিকদের সঙ্গে তার বৈঠক হয়। সেখানে তারা ইরান-চীন সম্পর্ক ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে আলোচনা করেন বলে জানা গেছে।
২০২৪ সালের মার্চ মাসে তাদের আলোচনায় উঠে আসে যুক্তরাষ্ট্র-পাকিস্তান সম্পর্ক। চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে আরেক বৈঠকে চীনা কর্মকর্তারা তাকে একটি লাল ব্যাগ উপহার দেন বলে অভিযোগে বলা হয়েছে।
কী শাস্তি হতে পারে?
দোষী সাব্যস্ত হলে টেলিস সর্বোচ্চ ১০ বছরের কারাদণ্ড ও আড়াই লাখ ডলার পর্যন্ত জরিমানা হতে পারেন।
Reporter